বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষ দিকে আমি গিয়েছিলাম বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত ষাট আওলিয়ার শহর,একমাত্র বাণিজ্যিক রাজধানী চট্রগ্রামে। সেই নজর কাড়া সবুজে আবৃত উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাঝে আধুনিক স্থাপনায় গড়ে ওঠা নয়াভিরাম চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায়।তবে ভাগ্যের ছিকে ঢাকাতে ছেড়ায় আর চট্রগ্রামে যেতে হয়নি।সেই সময় শেষ বারের মত শহরটা মোটামুটি ঘুরে দেখা হয়েছিল খুব সামান্য হলেও। অনেক কিছুই না দেখা হলেও হযরত বায়েজিদ বোস্তামি (রঃ)এর মাজার দেখা মিস হয়নি। পাহাড়ের চূড়ায় মাজারের পাশে একটি প্রায় মরা গাছ দেখেছিলাম যেটাতে অনেক মানুষ সূতা বাঁধছে আর বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই এখানে সূতা বাঁধার কারন; তিনি বললেন মনের বাসনা পূরণ হওয়ার জন্য মানুষ এখানে সূতা বাঁধে। তখন মনে মনে ভাবলাম আহ! মানুষ কত মারাত্মক কুসংস্কারের মধ্যে আছে। আল্লাহ্র মুখাপেক্ষী না হয়ে মাজারে আবার মাজারে সীমাবদ্ধ না থেকে মরা গাছের মুখাপেক্ষী হয়েছে। মনে করেছিলাম মানুষ শিক্ষিত হলে সঠিক পথে আসবে। যাই হোক আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত নসীব করুন।
গাছে সূতা বাঁধার একাংশের ছবি চট্রগ্রাম
আমরা কোন ভাল কাজের উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রায়ই সুশিক্ষিত, উন্নত তথা পশ্চিমা বিশ্বের দিকে ইঙ্গিত করি। তারা শিক্ষিত ও উন্নত তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তারাও যে অনেক কুসংস্কার বিষয় বিশ্বাস করে থাকে তা আমরা অনেকে হয়ত জানি না। আজকে তেমনই একটি কুসস্কারের কথা বলব। লাভ লক ব্রিজ বা “ভালোবাসার তালা সেতু”র যেটা ফ্রান্সের বিখ্যাত প্যারিস নগরীতে অবস্থিত। এই বিষয়টির কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখি ইউরোপ,এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশে অনেক দেশে ভালোবাসার তালা লাগানোর বিষয় বিদ্যমান আছে। তবে প্যারিস হল সেরা। ইউরোপ এ প্রায় সব গুলো দেশেই নাকি এটা আছে। যেমন অস্ট্রিয়া বেলজিয়াম বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ক্রোয়েশিয়া চেক প্রজাতন্ত্ ডেনমার্ক এস্তোনিয়া ফিনল্যান্ড ফ্রান্স জার্মানি হাঙ্গেরি আইসল্যান্ড আয়ারল্যান্ড ইতালি লাটভিয়া মাল্টা নেদারল্যান্ডস নরওয়ে পোল্যান্ড পর্তুগাল রাশিয়া সার্বিয়া স্লোভেনিয়া স্পেন সুইডেন সুইজারল্যান্ড রোমানিয়া ইংল্যান্ড স্কটল্যান্ড উত্তর আয়ারল্যান্ডের ইত্যাদি।
প্যারিসে এই লাভ লক ব্রিজ এর শুরুটা খুব বেশি আগে না হলেও এই লাভ লকের প্রচলন প্রায় ১০০ বছরের পুরনো ইতিহাস।
প্যারিসে লাভ লক ব্রিজে লেখক
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় সার্বিয়ার সেনারা অনেক যুদ্ধে গিয়ে পরে অন্য মহিলা বিয়ে করত আর ফিরে আসত না! আর এই দুর্ভাগ্য এড়ানোর জন্য যুবতী মহিলারা তাদের স্বামী বা প্রেমিককে চিরকাল কাছে পাওয়ার জন্য সেতুতে ভালোবাসার তালা লাগিয়ে দিত। তবে সর্ব প্রথম এক ইয়াং স্কুল শিক্ষক এই কাজটি করেন (নিউ ইয়র্ক টাইম্স), তবে অনেকে ধারনা করেন যে, ইতালিতে প্রথম চালু হয় যেটা ইতালিয়ান লেখক ফেদেরিক মচ্চিয়া তার ‘আই ওয়ান্ট ইউ’ বইতে উল্লেখ করেন যা থেকে পরে ‘হো ভগ্লিয়া দি তে’ নামে সিনেমা বানান হয়। প্যারিসের শহর কর্তৃপক্ষ বলেছেন যে, এই তালা ব্রিজে আনুমানিক ৭,০০,০০০ তালা আছে। তালার ভারে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শহর কর্তৃপক্ষ শক্ত রেলিং দিয়ে মেরামত করেছে।
তালা লাগানোর জায়গা না পেয়ে এক তালার সাথে অন্য তালা লাগাচ্ছে।
মূল সেতুর রেলিং এ তালা লাগানোর জায়গা না পেয়ে মানুষ এক তালার সাথে অন্য তালা লাগাচ্ছে। ভাষা গত কারনে লাভ লক ব্রিজের নাম ভিন্ন রকমে হয় যেমন, তাইওয়ানে বলে উয়িস লক বা হার্ট লক। তবে মজার ব্যাপার হল দক্ষিণ কোরিয়াতে এন সিউল টাউয়ারের পাশে লাভ লক ট্রি আছে।
দক্ষিণ কোরিয়া এন সিউল টাউয়ারের পাশে লাভ লক ট্রি
তবে অবাক করার বিষয় হল উল্লেখিত যে সমস্ত দেশে এই বিশ্বাসে বা ধারণাতে তাদের প্রেম, ভালোবাসা বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বাঁধন সুদৃঢ় করতে চাই তাদের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে প্রেম, ভালোবাসা বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থায়ী হয়না। এমন কি বিবাহের আগে বা পরে বাচ্চা জন্ম নিলেও সন্তানের টানেও তাদের সম্পর্ক ধরে রাখতে পারে না বরং হরহামেশায় ছিন্ন হচ্ছে অগণিত সম্পর্ক।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৫