শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ
প্রাইমারী মার্কেট:
প্রাথমিক বাজারে নতুন শেয়ার বা সিকিউরিটিজ এর লেনদেন করা হয়। নতুন কোন বিনিয়োগে অর্থ যোগানের উদ্দেশ্যেই এ বাজারে ফান্ড রেইজ করা হয়। সম্ভবত এই বিষয়টা নিয়েই সবার আগ্রহ বেশি। এটাকে আইপিও (Initial Public Offering) বলে।
ধরুন, গ্রীণ ভেলী হেলথ কেয়ার লিঃ অথবা গ্রীণটেক গ্রীণহাউজ বাংলাদেশ লিঃ নতুন একটা ওয়েবসাইট চালু করতে চায় যা জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন। সেজন্য আমি সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে প্রাথমিক বাজারে শেয়ার ছাড়তে চাই। কিন্তু তার জন্য কিছু কাজ রয়েছে। যেমন: প্রজেক্টের বিস্তারিত জনগণকে জানাতে হবে লিখিত আকারে যা প্রসপেক্টাস নামে পরিচিত। এখানে উদ্দেশ্য, কর্মপদ্ধতি, মূলধনের পরিমাণ যোগানের উপায়সমূহ, লাভের সম্ভাবনা, ঝুকির দিকগুলো, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ইত্যাদি বিশদ ভাবে লেখা থাকে যা থেকে সহজেই বোঝা যায় এটি লাভ জনক হবে কিনা।
নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন পত্র বাজারে ছাড়া হবে। বিনিয়োগকারীরা সে আবেদন পত্র পূরণ করে উল্লেখিত টাকাসহ ফরমটি নির্দিষ্ট ব্যাংক বা আইসিবি এর অফিসে জমা দিতে হবে।
যে কেউ আবেদন করতে পারবে?
এটি কোম্পানী এবং আবেদনকারীর মধ্যে একটি চুক্তি। সুতরাং চুক্তির শর্তগুলো পূরণ হতে হবে। যেমন: ১৮ বছর, সুস্থ মস্ত্বিষ্ক ইত্যাদি।
বর্তমানে শেয়ার বাজার ইলেকট্রনিক। সেজন্য আপনাকে কাগজের কোন শেয়ার দেয়া হবে না। শেয়ার বিস্তারিত জমা থাকবে স্টক মার্কেটের সার্ভারে। সেজন্য একটা একাউন্ট প্রয়োজন যা বিও/ BO (Beneficiary Owners) একাউন্ট নামে পরিচিত। একাউন্ট খুললে আপনাকে একটা নম্বর দেয়া হবে যাকে বলে বিও নম্বর। শেয়ারের জন্য আবেদনের সময় আবেদন পত্রে অবশ্যই এই নম্বরটি উল্লেখ করতে হবে। প্রতিটি কোম্পানীতে আবেদনের জন্য প্রত্যেকবার একাউন্ট খুলতে হবে না। একটা একাউন্ট দিয়েই সব কোম্পানীতে আবেদন করা যাবে।
বিও একাউন্ট যে কোন ব্রোকার হাউজে গিয়ে খুলতে হবে। এর ফি ২০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। প্রতি দুইজন ব্যক্তি ৩টি একাউন্ট খুলতে পারবে। দুইজনে আলাদা আলাদা দুইটা, আর দুইজনে মিলে আরও একটা।
সকল আবেদনপত্র জমা হলে, নির্ধারিত তারিখে লটারি অনুষ্ঠিত হবে। লটারিতে শেয়ার পেলে তা আপনার বিও একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হবে এবং আপনাকে প্রমানস্বরূপ এর সনদ দেয়া হবে। আর শেয়ার না পেলে আপনার টাকা ফেরত দেয়া হবে (রিফান্ড ওয়ারেন্ট)। সেজন্য অবশ্যই আবেদনসময় আপনার ব্যাংক একাউন্টের তথ্য (নাম, নম্বর) দিতে হবে। অবশ্য বিও একাউন্ট খোলার সময়ই আপনাকে ব্যাংক একাউন্ট আছে তার প্রমানহিসেব ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে।
টাকা/শেয়ার কিভাবে দেয়া হবে?
কোম্পানী পত্রিকার মাধ্যমে তারিখ ও স্থান জানিয়ে দিবে। এ তারিখে আপনি সনদ বা রিফান্ড ওয়ারেন্ট নিজ হাতে বা অন্য কারও মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারেন। তবে এ সময় অবশ্যই আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর মানি রিসিপ্টটি জমা দিতে হবে। আর আপনি যদি হাতে হাতে তা সংগ্রহ না করেন তাহলে তা কুরিয়ারে আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। অবশ্য তখনও সেই স্লিপটি লাগবে।
রিফান্ড ওয়ারেন্ট টি একটা ক্রস চেক। এটি আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমা দিতে হবে। ব্যাংক তা সংগ্রহ করে রাখবে।
প্রাথমিক বাজারে শেয়ারের দাম:
শেয়ারের দাম মূলত তিন ধরণের দামে বাজারে আসতে পারে:
১. লিখিত মূল্যে: অর্থাৎ ধরুন যদি প্রতিটি শেয়ারের লিখিত মূল্য ১০০ টাকা এবং সেটি বাজারেও এই দামেই ছাড়া হয়।
২. প্রিমিয়ামে: প্রতিটি শেয়ারের লিখিত মূল্যের চেয়ে যদি বেশি মূল্যে শেয়ার ছাড়া হয়। যেমন: গ্রীণ ভেলী হেলথ কেয়ার লিঃ ( নাকি গ্রীণটেক গ্রীণহাউজ বাংলাদেশ লিঃ ?) কোম্পানী ১০ টাকার শেয়ার বাজারে ছেড়েছিল ১২০ টাকায়। এটি সাধারণত নির্ভর করে যে ধরনের ব্যবসা করছে তার উপর। গ্রামীণফোন শেয়ার বাজারে আসবে। তখন তাদের ১০০০ টাকার শেয়ার ১০০০০ টাকায় ছাড়াও বিচিত্র হবে না (অবশ্য লিখিত মূল্য ১০০০ টাকা না হয়ে ১০০ অথবা ১০ টাকাও হতে পারে)।
৩. ডিসকাউন্টে: লিখিত মূল্যের চেয়ে কম দামে শেয়ার ছাড়লে। বদনাম আছে এরকম কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রে এটি ঘটতে পারে।
সেকেন্ডারী মার্কেট:
শেয়ার পেলে তা আপনার বিও একাউন্টে তা জমা হয়ে যাবে। তারপর আপনি সেই শেয়ার বাজারে বিক্রয় করে দিতে পারবেন। একেই সেকেন্ডারী মার্কেট বলে। এখানে মালিকানাধীন শেয়ার সমূহ বিক্রয় করতে পারেন বা শেয়ার কিনতে পারেন। এখানে দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে। চাহিদা ও যোগান আবার নির্ভর করে তথ্যের উপর। একটি দক্ষ মার্কেটে শেয়ারের দাম/চাহিদা/যোগান সম্পূর্ণভাবে তথ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। কিন্তু আমাদের মার্কেট দক্ষ নয়। তাই এখানে অন্য কিছুর উপর তা নির্ভর করতে পারে;D।
প্রাথমিক বাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন ভাগ্য। এটি প্রায়ই ঝুঁকিবিহীন। কিন্তু সেকেন্ডারী মার্কেটের জন্য প্রয়োজন এনালাইসিস। যথাযথ গবেষণা না করে একটা কোম্পানীর শেয়ার কিনলেই লাভবান হওয়া যাবে না বরং পথে বসে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য শেয়ার বাজারের উপর নিয়মিত চোখ রাখতে হবে। বুঝে শুনে লেনদেন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেও তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
নিয়মিত ভিজিট করুনঃ ঢাকা স্টক একচেঞ্জ: http://www.dsebd.org চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ: http://www.csebd.com
১. ৩১ শে জুলাই, ২০০৯ ভোর ৪:৫২ ০