somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুরাদ দ্য লাইট ইন দ্য ডার্ক -২ পর্ব

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত পর্বের পর থেকে...
সুলতান কে রাজকর্মচারীদের একটি অংশ বয়সন্ধি থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত রাজ্য পরিচালনার বিষয়াদি ও ঘটনাক্রম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দৃষ্টি গঠনে সাহায্য করে। বলশালী তরুণ সুলতানের ছিল ভ্রুকটি আর ভয়ংকর দৃষ্টির অভিব্যক্তি। ইভলিয়ার মতে তিনি ছিলেন“ অ্যাথলেটিক,সুগঠিত দেহের অধিকারি।শক্রুরা তাকে অসম্ভব ভয় ও শ্রদ্ধা করত" ।বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার চেয়েও দ্রুত তীর ছুড়তে পারতেন সুলতান।বন্দুকের গুলির চেয়েও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা এ তীর চার ইঞ্চি পুরু ধাতুর পাতকেও ফুটো করে ফেলতে পারত । কথিত আছে বহুদূরে বর্শা ছোড়াতেও এতটাই দক্ষ ছিলেন যে একবার এক মাইল দূরে অবস্থিত মিনারের ওপর বসা দাঁড়কা কে মেরে দিয়েছিলেন সুলতান। ঘোড়সওয়ার হিসেবেও সুদক্ষ সুলতান পূর্ণ গতিতে ছুটে চলা এক ঘোড়ার ওপর থেকে আরেক ঘোড়ার উপর লাফ দিতে পারতেন। পেশি শক্তিতে বলীয়ান সুলতান ছিলেন একজন অবিসংবাদিত মুষ্টিযোদ্ধা। একবার খেলাচ্ছলে স্বয়ং ইভলিয়াকে বন্দির মতো বেঁধে ফেলেন সুলতান। ইভলিয়ার ভাষায়, “এক ঈগলের মতোই আমার বেস্ট দিয়ে আমাকে বেঁধে ফেলেন সুলতান। তারপর মাথার ওপর তুলে বাচ্চার মতোই ঘোরাতে থাকেন।” অবশেষে হাসির মাধ্যমে এ খেলার শেষ হয় ও ইভলিয়াকে আটচল্লিশটা স্বর্ণ টুকরা উপহার দেন সুলতান।
কিন্তু এ ধরনের খেলা শীঘই ভয়ংকর দিকে মোড় নেয়। ১৬৩২ সালে সিপাহিরা একত্রিত হয়ে হিপোড্রোমে বিদ্রোহ করে। তিন দিন ধরে দোকানপাট ঘরবাড়ির দরজাজানালা বন্ধ রাখে সবাই ভয়ে। এ সময়ে সেরাগলি প্রাসাদের দরজা-জানালাও বন্ধ রাখা হয়। বিদ্রোহীরা এ সময় সতেরোজন।নির্দিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মচারীর উদ্দেশ্যে গালমন্দ করতে থাকে। এদের মধ্যে সুলতানের ভগ্নিপতী ও প্রধান উজির হাফিজ পাশা ও প্রধান মুফতির নাম ছিল।দিওয়ানদের সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে আসার সময় পাথর ছুড়ে ঘোড়া থেকে।নামতে বাধ্য করা হয় হাফিজ পাশাকে।এরপর প্রহরীদের পাহারায় সুলতানের কাছে পৌছে নিজের কর্মপদে ইস্তফা দিয়ে রাজকীয় সীলমোহর সুলতানের কাছে ফেরত দিয়ে নৌকাযোগে স্কুটারিতে চলে যায় হাফিজ পাশা।

বিদ্রোহীরা এরপর দ্বিতীয় রাজদরবারে জড়ো হয়ে সুলতানকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে যেন তাদের সামনে দিওয়ানদের সভা অনুষ্ঠান করা হয়। সুলতান নির্ভিক ভাবে হেঁটে সৈন্যদের কাছে উপস্থিত হয়ে তাদের দাবি-দাওয়া শোনেন। সৈন্যরা।তাঁর চারপাশে জড়ো হয়ে সতেরোজন বিশ্বাসঘাতককে দাবি করতে থাকে।নচেৎ ভয়ংকর সমস্যার হুমকি দেয় তারা। মুরাদ নিজের সম্মানসূচক স্বরে প্রতিউত্তরে জানান, “আমার কথা শোনার কোনো যোগ্যতাই নেই তোমাদের কেন আমাকে এখানে ডেকেছো?” এরপর সৈন্যদের প্রহরায় সে স্থান ত্যাগ করেন সুলতান।এরপর নবনিযুক্ত প্রধান উজির রেজেব পাশা সৈন্যদের দাবি মিটিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। সুলতান হাফিজের উদ্দেশ্যে নদীতীরে লোক পাঠিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জানিসারিস ও সিপাহিদের উদ্দেশ্যে বলেন যে,খলিফাদের পবিত্র সম্মান তাদের রক্তপিপাসু দাবি দ্বারা কলঙ্কিত বা করতে। বিদ্রহীরা হাফিজ পাশাকে হত্যা করতে চাই।হাফিজ স্বেচ্ছায় সুলতানের সামনে এসে আৰ্জি জানায় যেন সুলতান নিজের হাতে তাকে হত্যা না করে, বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দেন। তাহলে তার নিষ্কলুষ রক্তে তাদের মাথা নত হবে ও হাফিজ শহীদের সম্মান পাবে।এরপর হাফিজ ভূমি চুম্বন করার পর আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করে হত্যাকারীর দিকে অগ্রসর হয়।যখন এই বীর বিদ্রহীদের মধ্যে পৌছালো তখন মাথায় বাড়ি মেরে ফেলে দিল তাকে। এরপর অন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ছুরি দিয়ে সতেরোটি ক্ষত তৈরি করে হাফিজের দেহে। একজন জানিসারিস বুকের ওপর বসে মাথা কেটে ফেলে।একজন ভৃত্য এসে সবুজ কাপড়ে আচ্ছাদন করে দেয় হাফিজের মৃতদেহ সমাহিত করার জন্য।

সুলতান বন্ধুর বীরত্বে চোখের পানিতে ভেসে গিয়ে প্রাসাদের দরজায় উচ্ছৃঙ্খল জনতার উদ্দেশ্যে বলে উঠেন,“যদি আল্লাহ্‌ চান তোমরা জঘন্য হত্যাকারীরা ভয়ংকর পরিণতি বরণ করবে, তোমরা আল্লাহকে ভয় পাও না আর নবীজির সাম্মানে লজ্জা করো না"।সুলতানের বাক্যকে হালকা ভাবে নিয়ে প্রধান মুফতিকেও তার পদ থেকে বহিস্কার করে বিদ্রোহীরা। কিন্তু কিছু সময়ের মাঝেই পূর্বের মতো জানিসারিস ও সিপাহিদের মাঝে আভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়। এছাড়াও চরমপন্থীদের দস্যুতার বিভীষিকায় হতবাক হয়ে শান্তিকামী সৈন্যরা নিজেদের তরবারি নিয়ে সুলতানের পাশে এসে জড়ো হয়।মুরাদ, নিগৃহীত হয়ে প্রতিশোধের তৃষ্ণায় ও ওসমানের মতো একই ভাগ্য বরণের ভয়ে “মারো নয়তো মরো"-র নীতি গ্রহণ করেন। আর এর সবকিছুর পেছনে রেজেব পাশার ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করেন সুলতান; যে কিনা হাফিজ পাশাকে হটিয়ে প্রধান উজির হয়েছে। সকালে দিওয়ানদের সভা থেকে ফেরার পর রাজ গৃহাধ্যক্ষ রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসে রেজব পাশাকে। সুলতান যখন তাকে ডাকে তাকে তখন সে এক ধরনের ভয়ে, ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে সুলতানের দিকে এগোতে থাকে। সুলতানের আদেশ শুনতে পায় পাশা, "এখানে আসো খোড়া,আচমনের জন্য পানি প্রার্থনা করো অবিশ্বাসী”! রেজেব কিছু বলার আগেই সুলতান আদেশ দেন, “বিলম্ব ব্যতীত বিশ্বাসঘাতকের মাথা কেটে উড়িয়ে দাও"।আদেশ তৎক্ষণাৎ পালন করা হয়। মৃতদেহটিও সেই দরজার বাইরে ফেলে দেওয়া হয়।এই অভূতপূর্ব দৃশ্যে ভীত এই দল দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়। এভাবেই পাশার দান উন্টে দেন সুলতান এবং শুরু হয় সুলতান মুরাদের শাসনামল।
চলবে......
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৯
৪৫৬ বার পঠিত
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

১. ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:২৪

হাসান রাজু বলেছেন: অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের জন্য । সংক্ষেপে লিখেছেন, ভালো লিখেছেন ।

২. ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৮

আবু তালেব শেখ বলেছেন: বন্দুকের গুলির চেয়েও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা এ তীর চার ইঞ্চি পুরু ধাতুর পাতকেও ফুটো করে ফেলতে পারত । কথিত আছে বহুদূরে বর্শা ছোড়াতেও এতটাই দক্ষ ছিলেন যে একবার এক মাইল দূরে অবস্থিত মিনারের ওপর বসা দাঁড়কা কে মেরে দিয়েছিলেন সুলতা,,,,,,,,,,,,,,,,,

এগুলো নিছক রুপকথার। এর সত্যতা নেই। গল্প

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চিন্ময় ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতার করা হল কোন উদ্দেশ্যে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৯

আমার ধারণা চিন্ময় ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য। ভালো উদ্দেশ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয় নাই। চিন্ময় ব্রহ্মচারীর কথা বার্তা আমার ভালো লাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অসমাপিকা, ২২শ অধ্যায়

লিখেছেন মেহবুবা, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৬


২১ অধ্যায়: Click This Link

তোমাকে বলেছিলাম
----নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
"তোমাকে বলেছিলাম, যত দেরীই হোক,
আবার আমি ফিরে আসব।
ফিরে আসব তল-আঁধারি অশথগাছটাকে বাঁয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিন্দুরা কেন ভারতে যায়?

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩২



দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করছেন না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২
×