খলিফা ওসমান ২য়
আমি শুরু করছি খলিফা ওসমান ২য় থেকে....
১৬১৭ সালে সুলতান প্রথম আহমেদের মৃত্যু হই।এরপর ক্ষমতায় আসে তার ভাই মুস্তফা।কিন্তু অযগ্যতার দরুন তাকে নির্বাসনে পাঠানো হই।এরপর ক্ষমতায় আসে সুলতান আহমদের ছেলে ওসমান। তিনি ছিলেন মার্শাল আর্টে ও বাহু চালনাই দক্ষ।তার ছিল সুলাইমানের মত জিহাদি জজবা। বসে থাকার পাত্র ছিলেন না।তাই তিনি পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য আদেশ দেন।প্রাথমিক ভাবে বিজয়ের পর ১৬২১ সালে, সুলেমানের সময়ের পর থেকে সবচেয়ে বড় হিসেবে বৃহৎ এক বাহিনী গঠন করেন ওসমান। যাত্রাপথ ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজেও বাধা আসে বিভিন্নভাবে। এমনকি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়া শ্রেয় মনে করে শত্রুর সামনে পড়ার হাত থেকে।এভাবে পরাজয় স্বীকার করে ইস্তাম্বুলে ফিরতে বাধ্য হয় সুলতান ও তাঁর বাহিনী। ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর তরুণ ওসমান শীঘই জানিসারিদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একে যুদ্ধের ব্যর্থতার দায়ভার ছিল তাদের আর ওপরে রাজকোষ খালি হয়ে যাওয়ায় আশানুরূপ বেতন-ভাতা পেত না তারা।আস্তে আস্তে সাম্রাজ্যের জন্য জানিসারিসরা হুমকি হয়ে ওঠে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে শক্ত বাহুর ওপর ভিত্তি কর সাম্রাজ্যের উথান ঘটেছিল;তারাই বিশৃঙ্গল ও লোভী হয়ে যুদ্ধক্ষমতা হারাতে থাকে। অন্যদিকে রাজধানী ইস্তাম্বুলে পর একের পর একের অযোগ্য সুলতানদের আবির্ভাবে ও সেরাগালিওর দুর্নীতির ফলে জানিসারিসরা শক্তিশালী ক্ষমতা অর্জন করে ও রাজদ্রোহ ঘটাতে থাকে। জানিসারিসদের শায়েস্তা করার জন্য আঠারো বছর বয়সী সুলতান ওসমান এশিয়া সীমান্ত থেকে সাহসী এবং যুদ্ধবাজ গভর্নর দিলাওয়ার পাশাকে ডেকে পাঠান। সুলতানের বৃহৎ এশীয় সেনাবাহিনী আদেশে , গড়ে তোলার তোড়জোড় হয় মিলিশিয়া হিসেবে কাজ করার জন্য। এদের মাঝে ছিল কুর্দি ও যুদ্ধ অন্যান্য মনোভাবাপন্ন গোত্রীয় লোক। প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর সুলতান এশিয়ার উদ্দেশ্য রওনা হয়ে আবার এশিয়ার রাজধানীতে ফিরে আসার মনস্থির করেন। যার মাধ্যমে জানিসারিস ও সিপাহিদের দমন করা সম্ভব হবে মনে করা হয়। ১৬২২ সালের বসন্তে ঘোষণা করা হয় যে সুলতান ব্যক্তিগত তীর্থ যাত্রায় মক্কা যাবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বয়সে তরুণ ও অনভিজ্ঞ হওয়ায় সুলতান এ ধরনের অভিযানের জন্য কঠোর গোপনীয়তার উপলব্ধি করতে পারেননি। তাঁর মন্ত্রিপরিষদও এ পরিকল্পনার সাথে একমত ছিল না। এমনকি প্রধান মুফতি
মক্কা গমনের বিরোধিতা করে। জানিসারিসও সিপাহিরাও
সন্দেহগ্রস্ত হয়ে ওঠে যখন এশিয়া পার হয়ে রাজকীয় তাঁবু নিয়ে যেতে বলা হই।এটা দিয়ে শুরু হল এক করুণ অধ্যয়....
এতে করে জানিসারিসরা একত্রে বিদ্রোহ করার মনস্থির করে।তারা হিপোড্রোমে একত্রে জড়ো হয়ে সুলতানের কাছে মন্ত্রি পরিষদের আত্নসমার্পনের দাবি জানায়। সুলতান প্রত্যাখ্যান করলে তারা প্রধান উজির ও মন্ত্রিপরিষদে ঢুকে পড়েও লুটপাট শুরু করে। প্রাসাদে ঢুকে পড়েও লুটপাট শুরু করে।
এমতাবস্থায় সুলতান এসিয়া অভিযান বাতিল করার প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে ক্ষান্ত করার চেষ্টা করে।কিন্ত জানিসারিসরা সেরাগলিওতে ঢুকে পড়ে।সুলতান এখানে কোনো বাহিনী প্রস্তুত রাখেননি। বরঞ্চ বাগানের মালিরাই ছিল রক্ষী। উত্তেজনার বশে সৈন্যরা সুলতানকে আক্রমণের পাঁয়তারা করতে থাকে ।দুর্বৃত্তের দল প্রাঙ্গনে জড়ো হলে কেউ একজন চিৎকার করে “আমরা মুস্তাফাকে সুলতান হিসেবে চাই ।” সাথে সাথে বাকিরাও গলা মেলায়। প্রাসাদের সবখানে তন্ন তন্ন করে খোজা হয় মুস্তাফাকে। দরজায় এসে বাধা পেলে সৈন্যরা এর ছাদের একটি অংশ ভেঙে দেখে মুস্তাফা দুজন নিগ্ৰো দাসের সাথে সময় কাটাচ্ছে। এখানে তিন দিন ধরে খাবার ও পানিবিহীন অবস্থায় ছিল সে ছিল। মুস্তাফাকে খাবার পানি এনে আবার অবরোধ করে ফেলে। প্রধান উজির ও কৃষ্ণ খোজা বাধা দিতে অসলে সৈন্যরা তাদের ছিড়ে টুকরা টুকরো করে ফেলে বিদ্রোহী দল মুস্তাফার মাতা সুলতানা ভালিদে তৎক্ষণাৎ তার দায়িত্ব নিয়ে মুস্তফার নামে নতুন সরকার গঠন করেন। ইতিমধ্যে সৈন্যরা ওসমানকে খুঁজতে থাকে। পলাতক অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মাথার পাগড়ি খুলে ফেলে বিদ্রহীরা।অপমানজনকভাবে জানিসারিসদের ব্যারাকে ঘোরানো হয় তাকে। পথিমধ্যে প্রিয় প্রধান উজিরের মৃতদেহ দেখতে পেয়ে তিনি চিৎকার করে বলে উঠেন "সে সরল! যদি আমি তার উপদেশ মেনে চলতাম। আমার ওপর এই দুর্ভাগ্য কখনোই আসত না।”
এরপর কান্নাজড়িত কষ্ঠে জানিসারিসদের কাছে জানতে চান "তোমরা আমাকে নিয়ে কী করতে চাও? তোমরা জানিসারিসরা নিজেদের সাথে সাথে সাম্রাজ্যের পতনও ডেকে আনছো"। এরপর বিদ্রোহী দলের নেতার দিকে।
তাকিয়ে বলে উঠেন, “আমাকে ক্ষমা করো যদি আমি না জেনে তোমাদের প্রতি অন্যায় করে থাকি। গতকাল পর্যন্ত আমি ছিলাম সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আজ আমি শূন্য। আমার উদাহরণ স্মরণ রেখো। এই পৃথিবীতে
তুমিও একই ভাগ্য বরণ করবে"।
এরপর সবাই সম্মিলিত চিৎকার করে ওসমানের শাসন ও বংশ অস্বীকার করলে সবাই মিলে তাকে সপ্তম টাওয়ারের কারাগারে নিয়ে যায়।
রেফারেন্সঃThe Ottoman Centuries(মিথ্যায় ভরা এই বইয়ের রেফারেন্স না দেওয়ায় উত্তম ছিল)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৩