somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্রোত ( পর্ব – ০১)

১৯ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছি। পূর্ণ যৌবনের খরস্রোতা নদীর যাত্রা মাত্র শুরু। যেমন আবেগ কাজ করছে তেমনি তীব্র ভালবাসার কাঙ্গাল। রঙ্গিন স্বপ্নে মধুময় হয়ে থাকি প্রতিটা ক্ষণ।
আমার নাম ফরায়েজী মৌন। কথা বলতে খুব ভালবাসি। আর খেলাদুলাটা হল আমার নেশা। লেখাপড়াটা করি ঠেকায় পড়ে। উপায়হীন হয়ে মাইঙ্কার চিপায় পড়ছি তাই পড়ালেখা করতে হচ্ছে। তা না হলে বই পত্রে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিতাম।
যায়হোক, কলেজ থেকে আমার বাসা একটু দূরে। তাই বন্ধুদের সাথে প্রাইভেট পড়তে পারছি না। অন্য বিষয়গুলা না পড়লে উদ্ধার হতে পারব। কিন্তু ইংরেজী!!!! আমার পক্ষে সম্ভব না। ইংরেজীর কথা শুনলেই আমার মুটামুটি জ্বর উঠে যায়। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। সুতরাং ইংরেজী প্রাইভেট আমাকে পড়তেই হবে। কিন্তু এমন একটা জায়গাতে থাকি কোন স্যার পাচ্ছি না। কি করি বুঝতেও পারছি না। বন্ধুদের সবাইকে বললাম। পরামর্শ চাইলাম। কেউ সমাধান দিতে পারলনা। এভাবে বেশ কিছু দিন চলে গেল। প্রথম বর্ষ পরীক্ষা কাছে আসতেছে। আমার অবস্থা ততটাই খারাপ হতে লাগল। হঠাত একদিন আমার এক মেয়ে বন্ধু এসে আমাকে বলল যে, “ মৌন তোদের এলাকাতে আমার বড় আপুর এক বান্ধবী থাকে। উনি ইংরেজীতে খুব ভাল। ইংরেজীতেই অনার্স করেছে। শুনছি উনি প্রাইভেট পড়ায়। তুই উনার সাথে দেখা কর।“ সাথে সাথে মনে হল আমার মাথার উপর থেকে একটা পাহাড়ের বস্তা সরে গেল। আমি ঠিকানা নিয়ে ঐ দিন বিকালেই ঐ আপুর বাসার দিকে রয়ানা হলাম।
আপুর বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার মুখে কোন কথা নেই। হাতের একটা আঙ্গুল কনিং বেলের সুইচে কিন্তু বাজাচ্ছিনা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কি করব বুঝতে পারছিনা। অনেক ক্ষন এভাবে থেকে হঠাত কনিং বেল চেপে দিলাম। আমার শরীর হাল্কা কাপতে লাগল। আমি আসলে একটা বোকা, আসছি পড়তে। উনি আমার ম্যডাম হবে। আমি এমন একটা ভাব করতেছি যে আমি আসছি প্রেম নিবেদন করতে!!!! হা হা হা... আসলে ভাবও না আমি নিজের অজান্তেই এতটা নার্ভাস হয়ে গেছি। কেন তা কিন্তু বলতে পারব না।
যাহোক, দ্রুতই দরজা খুলে গেল। একটা তের কি চৌদ্দ বছরের কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিল। কিঞ্চিত বাকা হয়ে আড় চোখেই দেখল। তারপর –
কাজের মেয়েঃ কে আফনে? কারে চাইন?
মৌনঃ আসলে আমি আসছি আপুর কাছে। আপু কি বাসায় আছেন?
কাজের মেয়েঃ হ আছে। দারাইন। আমি ডাকতাছি।
(মেয়েটা আপুকে ডাকতে ডাকতে ভিতরে চলে গেল।)

হঠাত একজন সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি রীতিমত ভ্যবাচেগা খায়া গেলাম। হা করে তাকিয়ে রইলাম। আপু জিজ্ঞাস করল-“ আমাকে খজুতেছ? কিছু বলবা?” আমার মুখে কোন শব্দ নেই। আপু মনে হয় কিছু একটা বুঝলেন। উনি আমাকে বাসার ভিতরে নিয়ে সোফায় বসালেন। আমার হাতটা যখন ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মনে হচ্ছিল যেন একটা হিম শীতল কিছু আমাকে ধরে আছে। সোফায় বসে আপু আরো কয়েকবার আমাকে জিজ্ঞাস করলেন আমি কেন এসেছি। কিন্তু আমার ত ফিউজ কেটে গেছে। অনেক ক্ষন পর হুস এল। বলতে লাগলাম- আ-আ-আ পু না মানে আসলে ইয়ে মানে...... আপু হাল্কা একটা ধমকের মত করে বললেন-“ কি মানে মানে করছ। যা বলবা ঠিক করে বল”। আমি তখন বললাম – প্রাইভেট প প প ড়ব। আমার এমন তোতলামি দেখে আপু খুব জুরে হাসতে লাগল। আর বলল-

আপুঃ তুমি এত তোতলামি করলে পড়াবা কেমনে? হা হা হা...... আর তুমি কি ছোট বেলা থেকেই এমন তোতলা?
মৌনঃ না আ আ... আ আ পু আমি তো তত লা না।
এইটা শুনে ত আপু নিজের হাসি আর আটকে রাখতে পারছিলেন না। কাজের মেয়েকে দিয়ে পানি আনলেন। আমাকে পানিখেতে বললেন। আমি খাচ্ছি আর এদিকে উনি হেসেই যাচ্ছেন। পানি খাওয়া আর আপুর হাসি, মনে হল আমি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছি। আর তোতলাচ্ছি না। তখন আপু আমাকে কিছু প্রশ্ন করলেন। তারপর বললেন ঠিক আছে আগামী কাল থেকে পড়তে আস। বিকাল করে আসবে। জি বিকাল করেই আসব বলে আস্তে করে একটা সালাম দিয়ে বের হয়ে আসলাম। আমার উপর দিয়ে একটা ঝর বয়ে গেছে।

রাস্তা দিয়ে হাটছি। হাটতে হাটতে ভাবছি আর ভাবছি। কি ভাবছি? কি আর আপুর কথা। আপুর নাম হল মৌমিতা ফারহানা। কি অবাক কান্ড!!!! আমার নামের সাথে অদ্ভুত মিল। আমার হল ফরায়েজী মৌন আর আপুর মৌমিতা ফারহানা। ফরায়েজী আর ফারহানা, মৌন আর মৌমিতা। আমি কি আপুর কাছে পড়তে আসছি? নাকি এইটাই আমার গন্তব্য??? কিছুই বুঝতে পারছি না। পড়ক্ষনেই আবার ভাবছি। ধুর এই সব কি আবলতাবল ভাবছি। উনি আমার কত বড়, আর উনি হবেন আমার ম্যাডাম।


পরের দিন বিকাল ৪টা বাজে। খুব দ্রুত রেডি হয়ে আপুর বাসার সামনে এসে দাঁড়ালাম। কনিংবেল বাজাব ঠিক এই সময় দরজা খুলে গেল। সেই তের চৌদ্দ বছরের কাজের মেয়েটা দরজা খুলে অপলক তাকিয়ে আছে। কী আজব! কোথাকার পানি কোথায় যাচ্ছে বুঝতে পারছি না।
মেয়েটাকে কনো রকম পাত্তা না দিয়ে সোজা ভিতরে চলে গেলাম। ড্রয়িং রুমে বসলাম। খাতা কলম বই খুলে রেডি হতে হতে আপু চলে আসল। আস্তে করে একটা সালাম দিয়ে আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম আপুর চেহারাটা কেমন যেন ফেকাসে হয়ে আছে। মনে হয় মনটা ভাল নেই। কিন্তু সাহস করে জিজ্ঞাস করতে পারলাম না।
পড়াতে শুরু করল। বোর্ড পরীক্ষায় প্রশ্নের ধরন কেমন হয়, কিভাবে উত্তর দিতে হবে এই সব বুঝিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আপুকে কেমন উদাস উদাস লাগছে। আমার মনোযোগ হারায় ফেলছি। আবার আপুকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম। আপুর এই রকম ফেকাসে চেহারাটা দেখে আমার মনটাও ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কওমি সমস্যার সমাধান কি?

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

দেশে বিশ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা কত জানেন? অসংখ্য। এর নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা কেউ দিতে পারেনাই, নামে বেনামে নিবন্ধিত অনিবন্ধিত মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি, মার্কিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মনের মত মানুষ

লিখেছেন সপ্তম৮৪, ০৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২২



এই মুহূর্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মনের কথাটি এই সমন্বয়ক বলে দিয়েছেন। ইউনুস স্যার নোবেল ম্যান। তিনি নিজের মুখে তো আর এমন কথা বলতে পারেন না তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শূন্যতার বিরম্বনা

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৯

"শূন্যতার বিরম্বনা "

তুমি আমার ভিতরে থাকা গভীর কষ্ট,
অনেক টা আলমারীতে তুলে রাখা পরতে না পারা
কাপড়ের মতো।
তুমি আমার বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা গভীর
এক ভালোবাসা,
যেখানে নেই কোনো প্রাকৃতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্রীয় মনোবিকৃতি ও জাতিসত্তার লোপ: নিৎসে, ফুকো, ফ্রয়েড ও মার্ক্সের দর্শনে বাংলাদেশের অন্তর্গত বিপর্যয় !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:২৩


আমরা কোথায় যাচ্ছি ? না, এই প্রশ্নটিই ভুল। আমরা আদৌ কোথাও যাচ্ছি কিনা, সেই নিশ্চয়তাই আজ খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা যে সমাজে বাস করি, সেটিকে আর সমাজবিজ্ঞান দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।।খালেদা জিয়া এখন ঢাকায়

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৪৫









দীর্ঘ চার মাস পর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে দেশে আছেন দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×