কতোদিন পর আমাদের দেখা হয়েছে বলুন তো?
হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, দু'লক্ষ বছর পর আমাদের দেখা।
ক্যামন ছিলেন? জানেন তো অংকে খুব কাঁচা,
সেকেন্ড মিনিট ঘন্টার সমীকরণে কিছুই বুঝিনি।
বরঙ আপনার কুকুরটাকে নিয়ে কিছু বলুনঃ
তার জিহ্বার লালায় এখনো কী স্নান সারেন?
নাকি আপনার পোষা বিড়ালটার মতো এখনো
কারো কোলঘেঁষে বসে থাকেন!
আচ্ছা, দু'লক্ষ বছর তো কম কিছু নয়। নিশ্চয়,
এখন সে উত্তাপ পান না, যা আগে পেতেন?
দেখছেন মানুষ প্রতিদিন ক্যামন বদলে যাচ্ছে,
আমাদের ঘুমোবার সময় ওদের সকাল আর জেগে ওঠবার সময়...
হা হা হা! ঠিক বলছেন----
দু'লক্ষ বছর পর আমাদের দেখা! কই পরস্পরের
আলিঙ্গনে একটু উত্তাপ নেবো,
তা না করে আমরা কুকুর বেড়াল নিয়ে পড়ে আছি!
সত্যিই মানুষ আমরা!
আসলেই কী মানুষ! দু'লক্ষ বছর তো কেউ বাঁচে না, তবে
আমাদের দেখা হলো কী করে! বড্ড অদ্ভুত লাগছে সব!
হিমবাহ গলে গ্যালো, প্রিয় স্বদেশ হয়ে গ্যালো হাঙ্গরের আবাস!
আচ্ছা, সত্যি করে বলুন তো, সত্যিই কী আমরা বেঁচে আছি?
না সব হেলুসিনেশন? যদ্দুর মনে পড়ে, আপনার শরীর থেকে
কুকুরের গন্ধ পেতে শুরু করার পর আপনাকে খুন করি।
কোনো সহজ স্বাভাবিক খুন নয়।
আপনার হাত দু'টো বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম
পানি ভর্তি একটা কলস, তারপর সলিল সমাধি।
যদিও পা দু'টো বেঁধে রাখিনি, ধারণকৃত ভিডিওতে
দেখেছিলাম আপনার ছটফটানি!
আপনি বেঁচে উঠলেন কী করে? নাকি আপনি মরেন নি
কিংবা ভূত হয়ে ফিরে এসেছেন? আমার ঘাড় মটকে তারপর...
কী বললেন? একসময় আপনাকে তুমি সম্বোধন করতাম?
আপনাকে তুমি সম্বোধন করবো কেন?
আপনিই তো আমি; শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ছিলেন।
আমার রাত-বিহান আপনি ছাড়া কিছু ছিলো না!
আবার খুনের কথা বলছেন? বললাম না একবার।
আপনার শরীর থেকে কুকুরের গন্ধ পেতে শুরু করেছিলাম।
তারপর... আপনি বুঝি...?
বাহ্ বাহ্! আপনার লেজুরবৃত্তিকে এখনো ঠিক বলছেন?
আপনার এই তোষামুদে আচরণ ছিলো আপনার মৃত্যুর কারণ।
কী বললেন? অন্যেরাও করছে, তারা বহাল তবিয়তে আছে!
তা থাকুক। ওদের আচরণ আমার ধর্তব্য নয়।
ওরা নিশ্চয় আমার শরীরের কলকাঠি নয়!
এই দেখুন আমার কঙ্কাল আচ্ছাদিত শরীর।
দেখছেন, কেমন আপসহীন, নির্ঝঞ্জাট ...
সকালে খেয়ে কাজে যায় আর শেষ বিকেলে ঘরে ফেরে,
যা পায় তাতেই ওর চলে যায়। আপনি?
আপনি ছিলেন আমার পাঁজরের প্রোকোষ্ঠে,
আপনার ইচ্ছে অনিচ্ছেয় ছিলো আমার সকাল-বিকেল-রাত।
আপনার ইচ্ছেতে কালোরাত হতো গোলাপী,
ধূসর প্রান্তর হতো সবুজ। আপনার ইচ্ছের যোগসূত্রে গাঁথা হতো
আমার খামখেয়ালীপণার বৈকালিক অবকাশ, সুখ রোদ্দুর!
এতোকিছু মনে রেখছি কী করে? আপনাকে খুন করবার
আগে সব টুকে রেখেছিলাম ডায়রীর পাতায় কালো অক্ষরে।
মনে নেই? সেইদিন ব্যাংক পাড়া থেকে ফিরে সুইসাইড নোটে
টুকে রাখা মৃত্যুতান্ত্রিক নিয়মের অনুকরণ কেব্কল রেছি।
এই দেখুন রোবটিক জীবনের ধ্রুপদী আয়োজন!
ক্যামন হুলুস্থুল কেটে যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে...
আপনাকে প্রয়োজন কিনা? ছিলেন বৈকি। আমাকে
কবর দেয়ার পূর্বে! দু'লক্ষ বছর যাবত কেবল শরীর
বয়ে বেড়াচ্ছি! যদি কখনো ঘুম ভেঙ্গে দেখেন পুবের
বাতায়নে রক্তাভ সূ্র্য প্রবেশ করছে কিংবা নিশুতি চন্দ্রিমা
ফুল হয়ে ফুটেছে তবে এসে দেখে যেতে পারেন!
আপনি ছাড়া, আপনাকে ছাড়া কতোটা ভালো আছি!
জানি এখোনি ঘুম ভেঙ্গে যাবে। আপনিও
চলে যাবেন! যাওয়ার আগে জেনে যাবেন, আত্না বলে
কিছু নেই! শরীরটাই সব। দেখুন, আমার স্বাস্থ্য আগের
চেয়ে কতোটা ভালো হয়েছে! এখন রোবটের মতো
করে যেতে পারি কাজ যতিচিহ্নবিহীন! সুখ সাগরে!
* প্রিয় দুই কবি অপর্ণা আপু এবং সোনালী ডানার চিল ভাইকে অনেক অনেক থ্যাঙ্কস।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৭