somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামাতের আমলনামা:

২৩ শে মে, ২০০৭ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামাত শিবির ১৯৭১ সালে দেশের সাথে বেঈমানী করার জন্য সবসময়ই খুব গর্ববোধ করে। কখনও কোন জামাত-শিবিরের মধ্যে কোন অনুশোচনা বা অপরাধবোধের প্রকাশ দেখবেন না, যেমন দেখবেন না ঠান্ডা মাথায় হত্যাকারী খুনীর কনফেশনে। গণহত্যা ও নৃশংসতার সাথে পাকিস্তানী ঘাতকদের সাথে আগাগোড়া সহযোগিতার জন্য বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ যাদের মনে নেই, চিন্তায় নেই, প্রকাশে নেই, তাদের স্পর্ধা ও সাহস আমাকে বিচলিত করে না। বরং তাদের এই দৃস্টিভঙ্গী সচেতন প্রজন্মকে অবিশ্বাস্যভাবে একত্রিত করে ঘাতকদের বিচারকে তরান্বিত করবে বলে আমার বিশ্বাস ও আস্থা প্রবল হতে থাকে।

এটা কারও অজানা নয় যে, জামাত যতোই গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না দেখাক না কেন তারা সবসময়ই সামরিক ও রাজনৈতিক স্বৈরাচারী শক্তির আশ্রয়ে বিকশিত হয়েছে। জামাতকে প্রতিহত করতে হলে তাদের অতীত ও বর্তমানকে সমানভাবে তুলে ধরতে হবে। তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে ধর্মীয়ভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও আইনগতভাবে। ক'দিন আগে ঘাতকদের জন্য প্রমাণপঞ্জী নিয়ে পোস্টে তুলে ধরেছিলাম একটি বুকলেট। এধরণের প্রামাণ্য দলিল ও তথ্যসূত্র রাজাকার জামাত শিবিরের মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে বলতে হবে কেন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ধর্মভিততিক রাজনীতির কোন সুযোগ নেই। ধর্ম নিয়ে তাদের বেচাকেনার হিসেব তুলে ধরতে হবে। ইসলাম ধর্ম কারও ব্যক্তিগত সম্পততি নয়, তাই ইসলাম নিয়ে দলীয় রাজনীতিরও কোন অবকাশ নেই।

জামাতের ধর্মভিততিক মুখোশ খুলে দিতে সবচেয়ে বেশী প্রামাণ্যতথ্য তুলে ধরেছে বাংলার ইসলাম ওয়েবসাইটটি। তবে রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবেলার জন্য পড়ুন একাততরের ঘাতক জামাতে ইসলামীর অতীত ও বর্তমান বুকলেটটি। মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্রের উদ্যোগে প্রকাশিত এই বুকলেটটি জামাতের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঘৃণ্য ভূমিকার কথা আমাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বইটি পড়ুন এবং প্রচার করুন। চেতনা ৭১'এর সৌজন্যে এই বুকলেটটি পিডিএফ ফরম্যাটে আপনাদের জন্য দেওয়া হলো।

এই বুকলেটটি স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশে আর স্বাধীনতার পরবর্তীতে ঘাতক জামাতীদের কার্যক্রম ও বক্তব্য প্রমাণসহ তুলে ধরেছে। ১৯৭১এর ১৪ই আগস্ট গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষণা দেন মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের শত্রু হিসেবে। খুব গর্বের সাথে বলেছিলেন, "বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য শান্তি কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে"। দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু ঘাতকের গর্ব বিন্দুমাত্র খর্ব হয়নি। তাদের বিচারের বিষয়টি হারিয়েছে রাজনীতির ডামাডোলে। বাংলাদেশের স্থিতি, শান্তি ও সকল শহীদদের ত্যাগের ঋণশোধের জন্য রাজাকারদের বিচারের কোন বিকল্প নেই।

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে গোলাম আযম করাচীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "কোন ভাল মুসলমানই তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থক হতে পারে না"। একই সময় ২৩শে সেপ্টেম্বর নিজামী বলেন, "যারা ইসলামকে ভালবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্তানকে ভালবাসে"। তাই স্বাধীন বাংলাদেশে এসব বেহায়ারা আবার মুসলমান হিসেবে দাবী করে নিজেদের ঈমানের সাথেই বেঈমানীর প্রমাণ দিচ্ছে। তাদের পাকিস্তানপ্রীতি বদলায়নি, শুধু বদলে গেছি আমরা এসব ঘাতকদের পাশে বসার সুযোগ করে দিয়ে। যুদ্ধাপরাধী জামাতীদের রাজনৈতিকভাবে পূনর্বাসিত করে বেঈমানী করছি তিরিশ লাখ শহীদের রক্তের সাথে।

এ কারণেই ১৯৮৬ সালের ১৪ই জানুয়ারী জামাত নেতা আব্বাস আলী খান যখন করাচীতে ঘোষণা দিয়ে আসেন, "বাংলাদেশের জনগণ এখন পাকিস্তানের সাথে তাদের বিচ্ছেদের কারণে অনুতপ্ত" তখন তার বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আসে না। ভুলেই গেলাম ছিয়াশি সালে কারা যেন ক্ষমতায় ছিল? অথচ সেদিনও পাকিস্তানী সিনেটর খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে। না, তারপরেও জামাত-শিবিরের মধ্যে কোন অপরাধবোধ জাগবে না।

কাওকে অনুতপ্ত করার নিষ্ফল চেস্টার জন্য এই লেখা নয়। সেই আশা বড্ডো অমূলক। ১৯৭১ সালের রাজাকার যুদ্ধাপরাধী জামাতীদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবার কোন বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের নিত্যকারের সংগ্রামের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। মৌলবাদের বিষক্রিয়া যখন দেশকে দূষিত করছে তখন মৌলবাদী রাজনীতির ধারক-বাহক-পৃষ্ঠপোষক জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার কোন বিকল্প নেই। ঘাতক যখন আশ্রয় পায়, আর পৃষ্ঠপোষকতা পায় রাজনৈতিকভাবে ও রাস্ট্রীয়ভাবে, তখন সে স্পর্ধা তো দেখাবেই বিচারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। কোন ক্রোধ, হিংসা বা দ্বেষ দিয়ে নয়, বরং যুদ্ধাপরাধী জামাতীদের বিচারের লক্ষ্যে সামাজিক ও আইনগত আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব তাদের এই নির্লজ্জ স্পর্ধাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৫:০৪
২৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×