“ফ্রি ম্যাসন”, “ইলুমিনাটি”- শব্দগুলো ইদানিং আমাদের কাছে আস্তে আস্তে বেশ পরিচিত হয়ে আসছে। যদিও এটাকে বলা হয় সিক্রেট সোসাইটি, কিন্তু কিছু মুভি যেমন “অ্যাঞ্জেলস এন্ড ডেমনস”, “দি দ্য ভিঞ্চি কোড”, “ন্যাশনাল ট্রেজার”- এর মাধ্যমে,ব্লগ,বই,স্পেশালি ড্যান ব্রাউনের বইয়ের মাধ্যমে এদের নিয়ে সাধারনের মধ্যে এখন অহরহই আলোচনা হচ্ছে। ফ্রি মেসনসের নিয়ে নেগেটিভ ধারনাটাই সবার মধ্যে প্রবল, যদিও মুভি-সিনেমায় তাদেরকে পজিটিভলি দেখানোর চেষ্টাটা বেশি দেখা যায়।
আমেরিকাকে ধরা হয় মেসনদের পরিকল্পিত এক ভূমি। তার ছাপ সবখানেই ছড়িয়ে আছে। আমেরিকার ডলারটার দিকেই নজর দেয়া যাক।
আমেরিকান ডলারে একটু চোখ বুলালেই দেখতে পাব ‘আনফিনিশড’ একটা পিরামিড। যার উপরে আছে একটা ছোট পিরামিড। ছোট পিরামিডটা অসমাপ্ত পিরামিড থেকে একটু উপরে দূরত্ব রেখে আছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে, ঐ চোখ আলা ছোট পিরামিডটা যখন বড় অসমাপ্ত পিরামিডের মাথা গেথে বসবে, তখনই ষ্ট্রাকচারটা পূর্ন হবে।
এর মানে হচ্ছে, কাজ এখনও বাকি। Job not done yet!
এখন এই ছোট চোখটার অর্থ কি?? এর অরিজিনি-ই বা কোথায়। এর উত্তর পাওয়া যাবে পূর্ন ষ্ট্রাকচার তথা পিরামিডটার দিকে খেয়াল করলেই। ছোট চোখটাকে বলা হয় all seeing eye. এটা এসেছে পিরামিডের দেশ তথা প্রাচীন ইজিপ্ট থেকেই। মেসনরা তাদের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহার করে।
All seeing eye এর অরিজিন ইজিপ্টের প্রাচীন সূর্য দেবতা হোরাস (Horus) থেকে।
সূর্য দেবতা হোরাস।।
একচোখ বিশিষ্ট হোরাস ছিল দেবী আইসিস এর সন্তান। তার বাবা ওসিরিস। বলা হয়, ওসিরিস তার আরেক পুত্র সেথের হাতে নিহত হয়। মৃত ওসিরিসের অংগ প্রত্যঙ্গ জোড়া লাগিয়ে (প্রজনন অঙ্গ লাগাতে পারেনি) জাদু দিয়ে আইসিস তাকে কিছু সময়ের জন্য জীবিত করেন। এর পর আইসিসের গর্ভে জন্ম নেয় হোরাস। মৃত বাবা থেকে জন্ম নেয়ায় এটাকেও ভার্জিন বার্থ বলা হয়। ভিন্ন রকম হলেও আমাদের পরিচিত এরকম আরো ভার্জিন বার্থ হয়েছে জিসাস ক্রাইষ্ট বা হযরত ঈসা(আঃ) আর উপমহাদেশের গৌতম বুদ্ধের।
ওসিরিস।।
ওসিরিসকে বলা হয় লর্ড অব দ্য ডেথ। তার কালার সবুজ। এটা আইসিসের জাদুতে পুনর্জন্মের সিম্বল।
ওসিরিস,হোরাস ও সেথ।।
যাইহোক, ক্রমে সেথ আর হোরাসের বিরোধ চরমে ওঠে। সেথের সাথে এক যুদ্ধে বাম চোখ হারায় হোরাস। সেই থেকে “এক চোখ” মিশরের হোরাসের প্রতীক, সূর্য দেবতার প্রতীক।
'হোরাস আই'।।
আরেকটি 'হোরাস আই'।।
আবার আমেরিকান ডলারে ফিরে যাওয়া যাক। পিরামিডের নিচে লেখা Novus ordo seclorum- মানে নতুন বৈশ্বিক/ওয়ার্ল্ড অর্ডার।
অনেকে বলে থাকেন, এটা আসলে “সেকুলার” ওয়ার্ল্ড অর্ডার। সেকুলার মানে ধর্ম নিরপেক্ষ বা ধর্ম বাদ দিয়ে। আবার উপরে লেখা annuit coeptis-মানে he approves the undertaking (আমেরিকার অধিগ্রহন “তিনি” অনুমোদন দিয়েছেন)। ডলারটায় আড় বরাবর আরও লেখা, ‘In god we trust’.
সবই বোঝা গেলো, কিন্তু আমেরিকার স্থপতি ম্যাসনরা কোন ‘গড’-এ বিশ্বাস করে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করে অনেকে। অনেক কনস্পাইরেসি থিওরী মতে, ম্যাসনরা স্যাটানিক। অর্থাৎ তাদের “গড” বা 'তিনি'-টা আসলে লুসিফার/স্যাটান। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, আমাদের নবী (সঃ) যে দাজ্জাল/ এন্টিক্রাইষ্টের বর্ননা দিয়েছেন সেই দাজ্জাল হবে একচোখা,যা মেসনদের প্রতীক all seeing eye এর সাথে মিলে যায়। ধারনা করা হয়, বর্তমান বিশ্ব মেসনদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের রানী-সবাই ফ্রি মেসন। শুধু তাই নয়, ইংল্যান্ডের রাজবংশের সাথে আমেরিকার বেশিরভাগ রাষ্ট্রনায়কের রক্ত-সম্পর্ক আছে। আরও অবাক করা বিষয়, ইংল্যান্ডের রাজবংশ ‘windsore’-রা নাকি আসলে মিশরের ফারাওদের বংশধর!!
সেটা যাই হোক, বর্তমান আমেরিকা যে মেসনদের বহু পরিকল্পিত এক ভূমি সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের “সেকুলার” দুনিয়া পাবার আকাঙ্ক্ষার পাশেই লেখা In god we trust -এ যে গডের কথা বলা হয়েছে সেটা কোন গড?
এটা কি লুসিফার,নাকি প্রাচীন সূর্যদেবতা হোরাস, নাকি জিসাসের গড?
সবকিছু মিলিয়ে মেসনদের কাজকারবার যেন আলো আধারে ঘেরা এক রহস্যই সবার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫০