হিন্দুদের দুর্গাপুজারর সময় - খ্রীস্টানদের ২৫শে ডিসেম্বর তাদের ক্রীস্টমাস ডে এর সময়-১লা বৈশাখে অনেকেই যারা বলে থাকে ধর্ম যার যার উৎসব সবার!!!এই মতবাদের প্রবক্তারা কোথায়?আসুন সবাই পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করি।
মহান আল্লাহ্পাক তিনি বলেন , "আমি গুপ্ত ভান্ডার ছিলাম,আমার মুহব্বত হলো,নিজেকে প্রকাশ ইচ্ছে করলাম,তখন আমি আমার হাবিব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করলাম।"
অর্থ্যাৎ মহান আল্লাহ্পাকের রহস্য ও গুপ্তভেদ প্রকাশের মূল এবং একমাত্র মাধ্যম আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আর তাই ইরশাদ হয়েছে হযরত যাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্নিত তিনি বলেন,
"আমি জানতে চাইলাম,ইয়া রাসুলু্ল্লাহ,হাবিবুল্লাহ,ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।আল্লাহপাক সর্ব প্রথম কি সৃষ্টি করেন"?
তিনি বললেন,"আপনার নবীর নুর মুবারক অর্থ্যাৎ নুরে হাবিবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তৈরী করেন।অতঃপর সেই নুর মুবারককে লক্ষ্য করে বললেন আপনি আমার হাবিব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়ে যান।"সুবহানাল্লাহ্।
অতঃপর আসমান-যমীন, লৌহ-কলম, আরশ-কুরসী, জিন-ইনসান, হযরত ফিরেশতা আলাইহিমুস সালাম, বেহেশত-দোযখ ইত্যাদি পর্যায় ক্রমে সবকিছু সৃষ্টি করলেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকলে আমি আমার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করতাম না।” (দায়লামী,কানযুল উম্মাল)
আর তখন হতেই মহান আল্লাহ্পাক স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টির মুবারক উপলক্ষে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করে উনার প্রতি ছলাত পাঠ করে থাকেন তথা পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে থাকেন।
এই প্রসংগে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের সুরা আযহাবের ৫৬ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّـهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿٥٦
অর্থঃ "নিশ্চয় মহান আল্লাহ্পাক স্বয়ং এবং উনার ফিরিশতা আলাইহিমুস সালামগন সাইয়্যিদুল মুরসালিন,ইমামুল মুরসালিন,হাবীবুল্লাহ্ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (উনার জন্য ঈদ বা খুশি প্রকাশ করে ) ছলাত পাঠ করে থাকেন।হে মুমিনগন ! আপনারাও সাইয়্যিদুল মুরসালিন,ইমামুল মুরসালিন,হাবীবুল্লাহ্ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (উনাকে যে লাভ করলেন এই জন্য ঈদ বা খুশি প্রকাশ করে ) ছলাত পাঠ করুন এবং সালাম পেশ করুন অত্যান্ত আদবের সাথে।"
আর তাই আমাদের দায়িত্ব রহমত হিসাবে যে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাক পেয়েছি এ জন্য খুশি প্রকাশ করা।
এই প্রসংগে পবিত্র কুরআন শরীফের সুরা ইউনসু-এ ৫৮ নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
قُلْ بِفَضْلِ اللَّـهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থাৎঃ(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, মহান আল্লাহ পাক উনার ফযল ও রহমত (স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে) পাওয়ার কারণে তোমাদের উচিত ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা।এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।”
অর্থাৎ আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক উপলক্ষে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা।
অর্থাৎ যেদিন মহাসম্মানিত, মহামর্যাদাবান, সুমহান, অশেষ বরকতময় ও বেমেছাল ফযীলতপূর্ণ পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ,সেদিন পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ' আর সেদিনই হচ্ছেন প্রত্যেক ইমানদারদের সবচেয়ে সেরা খুশীর দিন । আজ মহাসম্মানিত, মহামর্যাদাবান, সুমহান, অশেষ বরকতময় ও বেমেছাল ফযীলতপূর্ণ পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ।
(১)বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলো, সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!
আসুন সবাই অত্যান্ত আনন্দের সাথে বরণ করি।
(২)বিশিষ্ট তাবেয়ী, যিনি শতাধিক সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন , ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীকত, হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন--
قال الحسن البصري رحمة الله عليه وددت لو كان لي مثل جبل احد ذهبافانفقته علي قراءة مولد النبي صلي الله عليه و سلم
অর্থ : আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ণ থাকতো তাহলে আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে ব্যয় করতাম !"
সুবহানাল্লাহ্ !!
(আন্ নেয়ামাতুল কুবরা)
(৩)হযরত মারুফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
“যে ব্যক্তি ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিশে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন লেবাস পরিধান করে,মীলাদুন্নবীর তাজিমার্থে সু-ঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে। আল্লাহ পাক তাকে নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতের সুউচ্চ মাকামে অধিষ্ঠিত হবে।“ (সুবহানাল্লাহ্) (আন্ নেয়ামাতুল কুবরা)
(৪)হযরত ইমাম সাররী সাক্বত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
“যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করল সে যেন তার জন্য জান্নাতে রওজা বা বাগান নিদিষ্ট করলো। কেননা সে তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহব্বতের জন্যই করেছে। আর আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” (তিরমিযি, মিশকাত, আন নেয়ামাতুল কুবরা)
(৫)সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
“যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজনে উপস্থিত হল এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করলো। সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ সে বেহেশ্তি হবে।” (সুবহানাল্লাহ্) (আন্ নি’মাতুল কুবরা)
(৬)হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
“যে ব্যক্তি মিলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে, লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্য দ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্য দ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন। (তাতে বরকত হবেই)”। (সুবহানাল্লাহ্) (আন্ নি’মাতুল কুবরা)
(৭)হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
যে স্থানে বা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্্যাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাকের ফেরেস্তাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসী গণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেস্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাইল, মীকাইল, ইসরাফিল ও আযরাইল আলাইহিমুস্্ সালামগণ মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর উপর সালাত-সালাম পাঠ করেন। (সুবহানাল্লাহ্) (আন্ নি’মাতুল কুবরা)
ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন -
“যখন কোন মুসলমান নিজ বাড়ীতে মীলাদ শরীফ পাঠ করে তখন সেই বাড়ীর অধিবাসীগণের উপর থেকে আল্লাহ্ পাক অবশ্যই খাদ্যাভাব, মহামারী, অগ্নিকাণ্ড, ডুবে মরা, বালা মুসিবত, হিংসা-বিদ্বেষ, কু-দৃষ্টি, চুরি ইত্যাদি উঠিয়ে নেন। যখন উক্ত ব্যক্তি মারা যান তখন আল্লাহ পাক তাঁর জন্য মুনকীর-নকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাঁর অবস্থান হয় আল্লাহ্ পাক-এর সন্নিধানে খখনসিদকের মাকামে। (সুবহানাল্লাহ্) (আন্ নেয়ামাতুল কুবরা) যে ব্যক্তি ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তাযীম করতে চাইবে তার জন্য উপরোক্ত বর্ণনা যথেষ্ট।
আর যে ব্যক্তির নিকট ঈদে মীলাদুন্নবীর তা’যীম নাই (সম্মান করে না) সারা দুনিয়া পূর্ণ করেও যদি তাঁর প্রশংসা করা হয় তথাপিও তার অন্তর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহব্বতে প্রকম্পিত হবে না।
প্রকাশ করা।
অর্থাৎ যেদিন মহাসম্মানিত, মহামর্যাদাবান, সুমহান, অশেষ বরকতময় ও বেমেছাল ফযীলতপূর্ণ পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ,সেদিন পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা '।আসুন আজ সবাই সবচেয়ে সেরা খুশীর দিন পালন করি ।।
এখন অনেকেই বলে থাকে যে,ঐ একই দিন সাইয়্যিদুল মুরসালিন,ইমামুল মুরসালিন,হাবীবুল্লাহ্ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহন করেছেন। তাহলে ঐ দিন কি করে খুশীর দিন হতে পারে?
এর উত্তরে বলতে হয় যে , কোন সাধারন মুসলমানের ওফাত পরবর্তী শোক পালন সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা হলো শোক হছ্ছে তিনদিন।।আর স্বামীর ইন্তেকাল হলে স্ত্রী শোক পালন করবে চারমাস দশ দিন।
কিন্তু নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য শোক নাই।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,"আমার বিলাদত শরীফ এবং বিছাল শরীফ উভয়ই তোমাদের জন্য রহমত,বরকত,ছাকীনার কারন।"
সুতারাং, সকলের উচিত আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক উপলক্ষে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা।