somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুক সেলিব্রেটি নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা

২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলার শেষ স্বাধীন ফেসবুক সেলিব্রেটি নাম নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। পুরো ফেসবুক কমিউনিটি একাই শাসন করতেন তিনি। উনি ছাড়া বাদ বাকি সবাই ছিলেন তার প্রজা মানে আম জনতা। সিরাজ-উদ-দৌলা স্ট্যাটাস আপডেট দিলেই হাজার হাজার লাইক কমেন্টস পড়তো মুহুর্তেই। পুরো বাংলা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়তো। অন্যান্য সবার লিষ্টে পাঁচ হাজার ফ্রেন্ড লিমিটেশন থাকলেও নবাবের ফ্রেন্ডলিষ্ট ছিল আনলিমিটেড। অন্য ফেসবুকাররা সিরাজ-উদ-দৌলাকে আদর করে নাম দিয়েছেন নবাব। তাই তিনি নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা নামেই পরিচিত!

নবাবের ক্লোজ ফ্রেন্ডলিষ্ট খুব বেশী বড় ছিল না। ক্লোজফ্রেন্ড লিষ্টে ছিলেন মীর জাফর, রায় দুর্লভ, জগৎশেঠ এবং উর্মিচাঁদ। ফ্যামিলিতে আন্টি হিসাবে ছিলেন ঘষেটি বেগম এবং নবাব সিরাজ উদ দৌলা ম্যারেড টু লুৎফুন্নেসা। ফেসবুক বাংলা কমিউনিটিতে হঠাৎ আগমন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নামক একটি জনপ্রিয় পেজের। প্রথম দিক থেকে এই পেজের কর্মকান্ড নবাব বিরোধী ছিল। এই পেজের এডমিন ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ যার ফেসবুক লিংক লর্ড ক্লাইভ নামে। তিনি নানাভাবে নবাবের বিভিন্ন স্ট্যাটাসের বিপরীতে স্ট্যাটাস দেয়া শুরু করলেন। স্বাভাবিক ভাবেই নবাব তা বরদাস্ত করতে পারেননি। তাই তিনি কলিকাতা দূর্গ প্রাচীর নামক ফেসবুকের গোপন গ্রুপ ভেঙ্গে ফেলতে নির্দেশ দেন। সে রাতে বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে নবাবের আইডিতে প্রচুর রিপোর্ট করা হল। ফেসবুক কতৃপক্ষ না বুঝেই নবাবের আইডি বন্ধ করে দিলেন। অসহায় নবাবকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসলেন আইটি স্পেশালিষ্ট হোসেন খাঁ । একদিনের চেষ্টায় জাতীয় পরিচয় পত্র দাখিল করে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার আইডি ফিরিয়ে আনেন তিনি। আইডি ফেরত পেয়েই তিনি স্ট্যাটাস আপডেট করেন

" বাংলা,বিহার,উড়িষ্যার ফেসবুক সেলিব্রেটি আমি নবাব সিরাজ উদ-দৌলা। আমিতো ফেসবুক সেলিব্রেটি হতে চাইনি। আমিতো চাইনি হাজার হাজার লাইক পেয়ে হাসতেম,হাজার হাজার ফলোয়ার আমার দরকার ছিল না। আমি চেয়েছিলাম ফেসবুকারদের ভালবাসা। চেয়েছিলাম একই স্ট্যাটাসে সারারত আড্ডা দিব। তবে কেন এই ফেসবুকাশে ষড়যন্ত্রের ঘনঘটা, তবে কেন সবাই আইডি রিপোর্ট করে ক্ষমতার লোভ?

দুই মিনিটে কয়েক হাজার লাইক পায় নবাব। না আজ তিনি লাইক গুনতে পারছেন না। আম ফেসবুকারদেও কমেন্টসে তার চোখে জল চলে এসেছে। একজন কমেন্টস করেছে ”লাভ ইউ ভাই”, আরেকজন লিখেছে ”ভাই টেনশন নিয়েন না, ম্যায় হু না” আরেকজন ছবি কমেন্টস করেছে ”আবেগে কাইন্দালাইছি”। শেষ একজনের কমেন্টস দেখে নবাব হুহু করে কেঁদে দিলেন। তিনি লিখেছেন ”এড মি এডমিন, আই লাইক ইউর ইস্টিটাস”। কত ভালবাসা মানুষের মনে, বানান ভুল আঁটকাতে পারেনি ভালবাসা। রবার্ট ক্লাইভ নবাবের কথা মানলেন না। নবাবের বিরুদ্ধে ক্লাইভের পোষ্টে লাইক দেয়ার পরও মীর জাফরকে কুরআন ছুঁইয়ে শপথ করালেন নবাব। কিন্তু এটা ছিল তার সবচে বড় ভুল। মীরজাফরই নবাবের সাথে একান্তই চ্যাটের স্ক্রিনশর্ট ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিলেন। কেবল মীরজাফর একা নয়, সাথে বেঈমানি করলেন নবাবের ক্লোজ ফ্রেন্ডলিষ্টের বাকিরাও। ফাঁস হয়ে গেল নবাবের রণকৌশল। কিন্তু নবাব কিছুই জানতে পারলেন না। কারণ তারা সিক্রেট গ্রুপ "ইংরেজ গ্যাং" -এ এসব নিয়ে আলোচনা করেছে। অবস্থা বেগতিক অনলাইনে ইংরেজরা নানা রকম অপকর্ম শুরু করল নবাবের বিরুদ্ধে।

পলাশীর সাইবার যুদ্ধ
২৩ শে জুন, পলাশীর প্রান্তর। ইংরেজ এবং সিরাজ-উদ-দৌলার মধ্যে শুরু হয়ে গেল সাইবার যুদ্ধ। ইংরেজরা প্রাথমিকভাবে ”লক্ষবাগ” নামক গ্রুপের সাহায্য নিয়ে অগ্রসর হতে থাকলো। কিন্তু হঠাৎ ইংরেজদের উপর আক্রমন করে বসলেন মিরমদন। মুহুমুহু রিপোর্টিং আর পোষ্টের যন্ত্রনায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যায় লক্ষবাগ গ্রুপটি। ক্লাইভ কিছুটা চিন্তিত হলেও তিনি দ্রুত আমের কেল্লা নামের আরেকটা গ্রুপ খুলে সাইবার যোদ্ধাদের একত্রিত করে উৎসাহ দেয়া শুরু করলেন। আবার শুরু হল যুদ্ধ। হ্যাকিং পাল্টা হ্যাকিং এ ইংরেজদের টেকার কথা না। কিন্তু আবার বেঈমানি করলেন মীর জাফর এবং তার দল। তারা নীরবে পপকর্ন নিয়ে বসে বসে যুদ্ধ দেখতে লাগলেন আর প্রেমের স্ট্যাটাসি দিতে লাগলেন। সেসময় মীরজাফর স্ট্যাটাস আপডেট করলেন ” যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা,যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা”। স্ট্যাটাসে নির্মলেন্দু গুণকে কার্টেসি না দিলেও কেউ তার চুরি ধরিয়ে দিলেন না। উল্টা সেই স্ট্যাটাসে লাইক দিলেন রবার্ট ক্লাইভ, রায় দুর্লভ এবং জগৎ শেঠ। ওয়াও লিখে সেটা শেয়ার দিলেন ঘষেটি বেগম।

তবুও আক্রমন ভাল চলছিল। কিন্তু দুপুরে হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। নবাবের ব্রন্ডব্যান্ড কানেকশন ডিসকানেক্ট হয়ে গেল বিনা নোটিশে। নবাব দ্রুত ব্রডব্যান্ড অফিসে ফোন দিলেন এবং জানতে পারলেন কক্সবাজারে ফাইবার অপটিক্যালের তার ছিড়ে গেছে। আজ আর নেট পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে ইংরেজদের হাতে ছিল ব্রিটিশ ওয়াইম্যাক্স মডেম। মীর জাফর আবার বেঈমানি করে ফেললেন। এই সুযোগে তিনি নবাবকে ব্লক করে দিলেন। রিপোর্টে বন্ধ হয়ে গেল মির মদনের আইডি। কোন মতে আইডি ডিএক্টিভ করে আইডি রক্ষা করলেন নবাব।

স্ত্রী এবং ভৃত্যকে নিয়ে নবাব পলাশী থেকে উত্তর দিকে যাত্রা শুরু করেন। তার আশা ছিল সেখানে পৌছালে সেখান থেকে কিছু আইটি এক্সপার্ট এবং সাইবার যোদ্ধা জোগাড় করে আবার নতুন উদ্যমে সাইবার যুদ্ধ শুরু করবেন। কিন্তু এজন্য তার দরকার এমবি। আইফোনটা পড়ে আছে কেবল এমবির অভাবে। তিনি টেম্পল রান খেলতে খেলতে নৌকা থেকে নেমে স্থানীয় এক বাজারে গেলেন এমবি কিনতে। এমবি কিনে কাষ্টমাইজ করে স্ট্যাটাস দিয়ে সাইবার যোদ্ধ জোগাড় করাই ছিল তার উদ্দেশ্যে। যে দোকান থেকে তিনি এমবি কিনতে গিয়েছিলেন সে দোকানদার এক সময় নবাবের স্ট্যাটাসে এড মি লিখে ব্লক খেয়েছিলেন। প্রতিশোধ স্বরুপ সে মীর জাফরের কানে পৌছে দেন নবাবের হদিস। অতঃপর নবাব গ্রেপ্তার হন। তাকে বন্ধী করে স্ত্রীসহ রাজধানীতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে মীর জাফরের উঠতি সেলিব্রেটি পূত্র মিরনের তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদী বেগ নামক এক হ্যাকার সিরাজ-উদ-দৌলার আইডি হ্যাক করে চিরতরে বন্ধ করে দেন। এভাবেই শেষ হয় বাংলার শেষ স্বাধীন ফেসবুক সেলিব্রেটির ক্যারিয়ার।
৬৩টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×