somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : জনৈক টিয়া

১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনৈক পাখি ডেকে বলেছিলো, আচ্ছা স্যার পাখির আগে জনৈক হবে?
-না পাখি কি মানুষ নাকি?
-কিন্তু স্যার পাখির নামতো জানিনা,চিনিও না।
মতিন মিয়ার পাখি রোগ হয়েছে। উঠতে বসতে শুতে পাখির ভাষা শোনে,বুঝে অনুবাদ করে জানায় সবাইকে। পাত্তা টাত্তা দেয় না কেউ। হেডমাষ্টার অবশ্যই মন দিয়ে শোনে। এজন্য মতিন মিয়ার প্রিয় মানুষ হেডমাষ্টার আফজল হোসেন। স্কুলের দুষ্টু ছেলেরা অবশ্যই স্যারকে ডিপজল,গোলাপজল ডাকে। তবে সেটা আড়ালে। আড়ালের কথা গুরুত্ব দিতে হয়না। আড়ালে বারাক ওবামাকেও বারেক ডাকে,তারেক ডাকে।
-তা স্যার জনৈক পাখি বলেছিলো টিয়া নাকি দুশ্চরিত্র,খারাপ
-কি বলো এসব? পাখিদের আবার চরিত্র আছে নাকি?
-আছে মানে স্যার স্ট্রং চরিত্র আছে,ওরা চরিত্র নামের বাংলা রচনা শেখে।
মতিন মিয়া স্কুলের দফতরি। তবে অনেক কষ্ট করে প্রমিত বাংলা ভাষাটা রপ্ত করেছে। এখন সে প্রমিত উচ্চারন করে। সমস্যা হয় এলাকার চা দোকানে গেলে। নোয়াখালীর কড়াইয়ের চর গ্রামে এটা একটু বেখাপ্পা। মতিন মিয়াকে ভুল বুঝে,মতিন মিয়া দোকানে গিয়ে বলে "ইদ্রিস একটা চা দাওতো"। ইদ্রিস মুখ বাঁকিয়ে বলে "এ্যাঁ হেতে আইছে শিক্ষিত মানুষ,স্যার হর্যন্ত আরগো লগে গেরাইম্মা ভাসায় কতা কয় আর হেতে ভাব ধরে"। এতে অবশ্য মতিন মিয়ার ভাবান্তর হয় না।
-স্যার জনৈক পাখির ঘটনা কি সত্য হিসাবে ধরে নিবো?
-ধরে নিলে কি হবে?
-ধরে নিলে কিছুই হবে না,
-আর ধরে না নিলে ?
-তাও কিছু হবে না
-তাহলে না ধরে ধরে নাও
-আচ্ছা স্যার তবে একটা সমস্যা হয়েছে স্যার
-কি
স্যার এখন টিয়ার দিকে তাকাতেই লজ্জা লাগে।কেমন জানি লাগে, স্যার আমিও কি দুশ্চরিত্রের অধিকারী? স্যার লজ্জা লাগছে।
হেডস্যার একটু ভাবে বললেন “মতিন মিয়া একটা কাজ করো তুমি টিয়া পাখির দুশ্চরিত্রের কাহিনীটা শেষ করো। তারপর কথা বলি”
মতিন মিয়ার হলুদ দাঁত বেরিয়ে গেল “স্যার ঘটনা তেমন কিছু না, সকালে কাক এসে আমাকে বলল টিয়ার চরিত্র ভালো না। আমিতো তাজ্জব বনে গেলাম।বিষয়টা খতিয়ে দেখা উচিত। তাই তদন্ত শুরু করলাম। ভালো করছি না স্যার?
-অবশ্যই ভালো করেছো? তো তদন্ত করে কি পেলে?
-তদন্ত করে যা পেলাম সেটাতো বিরাট কেলেঙ্কারির বিষয় স্যার। টিয়াতো বিরাট সুন্দরী,পুরা দুনিয়ার মানুষ জানে।
মতিন মিয়া কথায় কথায় দুনিয়ার মানুষের উদাহরন টানে।এটা একটা ভালো গুণ। একবার তার খালাতো ভাইয়ের বিরাট অসুখ হয়েছিলো। অসুখের নাম ডায়রিয়া। তো খালাতো ভাই ঔষুধ না খেয়ে ঘরে বাইরে অবস্থা। মতিন মিয়া গেলেন স্যালাইন নিয়ে। খালাতো ভাই স্যালাইন খাবে না। তখন আবার সে প্রমিত বাংলা শেখেনি। খালাত ভাই স্যালাইন খেতে অস্বীকৃতি জানালো,মাথা গেল গরম হয়ে।“হাগা পাতলা হইলে স্যালাইন খাইতে অয় দুনিয়া মাইনষে জানে আর তুই জানস না”। খালত ভাই খুব অবাক হয়েছিলো “কি কন ভাইছা অইন্য দ্যাশেও মাইনষের গু পাতলা হয়?

মতিন মিয়া প্রায় আধঘন্টা সময় নিয়ে খালাতো ভাইকে বুঝিয়েছিলো। সে গল্প এখনও সে রসিয়ে রসিয়ে বলে।“তো স্যার যেটা বলছিলাম তদন্ত করে বের করলাম টিয়ার ছিলো ছোট্ট সংসার,ঘরে তেমন কাজ ছিলো না,সন্তানও নাই। সারাদিন হলুদ ঠোঁট দিয়ে কেবল গান গাইতো। সে কি সুরেলা গান স্যার। শুনলে আপনিও প্রেমে পড়ে যেতেন।
-আমি আগে থেকেই টিয়ার প্রেমে পড়ে আছি। বাহুল্য বাদ দিয়ে আসল ঘটনায় আসো।
-ও আচ্ছা ঠিক আছে স্যার! তো পুরুষ টিয়াটা আবার ব্যস্ত মানুষ। কাজে বের হয়ে যেত সকালেই। সারাদিন উড়াউড়ি কত কাজ।স্যার ঘন্টাটা দিয়ে আসি। নইলে ছেলেপেলে টায়ার্ড হয়ে যাবে।
মতিন মিয়া ঘন্টা দিতে যায়।কড়াইয়ের চর আদর্শ বিদ্যালয়ের রেজাল্ট তেমন ভালো না হলেও অন্তঃথানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তার বরাবরই এক নম্বর। এজন্য স্কুল কমিটি মাঝে মাঝে হেডমাষ্টার আফজল হোসেনকে দায়ি করে। আফজল হোসেন ভিন্ন চরিত্রের লোক। ক্লাস এইট এবং নাইনের ইংরেজি ক্লাস নেন।ক্লাসে পড়ানোর সময় কোন ছাত্র যদি বলে “স্যার ভালা লাগের না,ক্লাস কইরতান্ন”। আফজল হোসেন খুব সুন্দর করে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন “যাও ক্লাস থেকে বের হয়ে খেলতে যাও,ভালো লাগলে আবার এসে ক্লাস করবে”। একবার নারায়ন নামের ক্লাস নাইনের এক হিন্দু ছেলে একই ক্লাসের কুলসুমা নামের মুসলমান মেয়ের সাথে প্রেম করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলো। আফজল হোসেন অনেক বুঝিয়ে দুজনকে বিভিন্নভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিতেন। কিন্তু কুলসুমার বাবা স্কুল কমিটিতে নালিশ করলে আফজল হোসেনের চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়।

‘স্যার আসছি” মতিন মিয়া ঘরে প্রবেশ করে।
-শুরু করো
-স্যার এর পর আপনার একটা ক্লাস আছে। যাবেন না?
-যাবো। তার আগেই গল্প শেষ করো
-জ্বি স্যার। তারপর পুরুষ টিয়া স্যার কাজে যেত,খাবার সংগ্রহ আরকি। এদিকে বাড়ীতে নারী টিয়া বসে থাকতো একা একা। এই সুযোগে অন্য বাড়ীর আরেক টিয়া লাইন মারতো নারী টিয়ার সাথে।
-কেবল টিয়ার সাথে কেন? অন্য পাখির সাথে সমস্যা কি?
-স্যার এইটা টিয়াদের রীতি,অন্য গোত্রে বিবাহ,লাইন মারার জায়েজ নাই। এমনকি চরিত্র খারাপ করারও নিয়ম নাই। চরিত্র খারাপ করলেও মহিলা টিয়া কিন্তু নিয়মের বাইরে যায় নাই।

মতিন মিয়া কথা বলার মাঝখানে মাঝখানে মুখ দিয়ে ভিতরে বাতাস প্রবেশ করায়। এ সময় অদ্ভুত শব্দ হয়।এটা ছোট বেলার স্বভাব।গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু বলার সময় শব্দটা আরও বেশী করে। টিয়া পাখির গল্পটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মতিন মিয়া আবার শুরু করে “তো স্যার হয়েছে কি,বাড়ীতে একা বুঝেনইতো,মানুষরাইতো খারাপ হয়ে যায়,আর এটাতো পাখি। লাইন মারতে গিয়ে চরিত্র খারাপ হয়ে গেল।এটা আবার দেখেছে কাক।
আফজল হোসেন গল্পে বাধ সাধেন “মতিন তুমি না বলছিলা জনৈক পাখি,কিন্তু তুমিতো পাখিটার নাম জানো। তাহলে জনৈক বলছিলা কেন?
মতিন মিয়া লজ্জা পায় “স্যার এসব শব্দ ব্যাবহার করছি,গাও গেরামে এসব ভালো শব্দ ব্যবহার করার জায়গা পাই না। তাই আরকি।
এই গ্রামে ভালো শব্দ ব্যবহারের সুযোগ কম। সেদিন মতিন মিয়া সাঁকো পার হচ্ছিলো।এক মুরব্বীর মুখোমুখে হবার পর মতিন মিয়া কাছে গিয়ে বলল “স্যরি মুরব্বী,আমারই ভুল হয়েছে,আমি ব্যাক করছি”। মুরব্বী খুব অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো মতিনের দিকে। সাঁকো পার হয়ে মতিনকে অতিক্রম করবার সময় বেয়াদব বলে হনহন করে হাঁটা দিয়েছিলো।
-আচ্ছা বলো
হেডস্যারের কথা শুনে মতিন আবার শুরু করলো “তো কাক পাখি দেখে ফেলার পর,সেদিন গাছে উপরে বসে কা কা করছিলো। ব্যাটাতো বুঝেনি আমি ওর ভাষা বুঝি। আমি তার ভাষায় তাকে কাহিনী জিজ্ঞেস করলাম। ভয় পেয়ে সব বলে দিলো”
-এখন পুরুষ টিয়ার কি অবস্থা? সংসার টিকবে?
মতিন মিয়া দীর্ঘশ্বাস নেয় “সেইটা একটা বিষয় স্যার,নিশ্চয় পুরুষ টিয়াটা মন খারাপ করে বসে আছে। বেচারারই দোষ কি বলেন। রুজি রোজগারতো করতে হবে।
ঘন্টা দেবার সময় হয়ে গেছে।আফজল হোসেন ঘড়ি দেখলেন। মতিনের দিকে চোখ দিকে তাকিয়ে আফজল হোসেন ডাক দিলেন
-মতিন
-জ্বি স্যার
-তুমি পাখির ভাষা বুঝো?
-স্যার আমারে সন্দেহ করলেন? খুব দুঃখ পেলাম স্যার খুব দুঃখ পেলাম। বিশ্বাস করলেন না? কাক নিজে আমাকে এসব বলেছ স্যার

মতিন মিয়া লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে। আফজল হোসেন শুরু করলেন "শোন মতিন মিয়া,পাখিদের কথা কেউ বুঝতে পারে কিনা আমি জানিনা। তবুও তোমার কথা আমি মনযোগ দিয়ে শুনি,ভালো লাগে শুনতে। তুমি খুব ভালো গল্প বলো। বলতো তোমার কথা আমি কেন শুনি?
-কেন স্যার?
-তুমি পাখির নাম করে নিজের কথা বলো।নিজের দুঃখের কথা বলো।অন্য কেউ এমন পারে না।আমার শুনতে ভালো লাগে,অন্যের দুখের কথা শুনতে আরাম। ঘন্টা দাও ক্লাস করতে হবে। আজ আবার ওদের পরীক্ষা নিবো বলেছি।

৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×