বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে তারা যে প্রস্তুতি নিয়েছে সেটা নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। এখন এই অবস্থায় পক্ষে-বিপক্ষে দুটো গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়েছে।
পক্ষকারীদের লজিকঃ
• যে লেট করেছে সে নিজের লেখার কম সময় পাবে, তাতে পরীক্ষকদের কি সমস্যা
• রাস্তা ঘাট ও পরিবহনের অবস্থা সবার জানা, তাহলে অল্প কয়েক মিনিট লেট হলে এত ইসু হবে
• যারা লেট করেছে তারা পরীক্ষার সুযোগ পেলে সড়কের অনিয়ম নিয়ে নিয়ে ভাবার সুযোগ পেত
বিপক্ষকারীদের লজিকঃ
• যারা সময়ের মূল্যায়ণ করেনি তার ফল পাবে এটাই স্বাভাবিক
• যারা সময়ের মূল্য রচনা মুখস্থ করেও কাজে লাগায়নি, তারা দেশের কি করবে, তারা অযোগ্য
• পরিদর্শকেরা দায়িত্ব কর্তব্য অনুযায়ী নিরাপত্তার জন্য গেট লাগিয়ে দিয়েছে, যেন কোনো থার্ড পার্টির ঝামেলায় পরীক্ষার ক্ষতি না হয়
বিসিএসের পড়া যেরকম সময় নেয়, তাতে কেউ পরীক্ষার সুযোগ না পেলে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। আমরা অনেক ভাই বোন সিনিয়রকে ইনকামের পাশাপাশি রাত জেগে সংগ্রাম করতে দেখেছি। কিন্তু লেট ইসু নিয়ে বলবো যে, বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক কাজকারবার যেহেতু আবেগ দিয়ে চলে না, তাই আপনাদেরও আবেগ দিয়ে পরীক্ষার্থীদের সিমপ্যাথি দেওয়া ঠিক হবেনা। আমি স্টুডেন্ট লাইফ থেকে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের কিছু জিনিস দেখে আসছি। তার মধ্যে নেগেটিভ বিষয়গুলো হলোঃ
১. সামাজিক ও বাস্তবধর্মী জ্ঞানের অভাব
বিসিএস-এ লাখো মানুষের মধ্যে সহজভাবে মেধা বাছাই করার জন্য একটা কঠিন প্রশ্ন পদ্ধতি বানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আপনাকে প্রচন্ড পড়াশোনা করতে হবে। এজন্য ক্লাসের সবচেয়ে সেলফিশ বইয়ের মধ্যে মুখ গোঁজা ছেলেমেয়েরাই বিসিএসে টিকে যেত। আর এই অসামাজিক মানুষগুলোর অন্যন্য কমন সেন্স বা সোশাল নলেজ কম থাকে। কোন দেশের মুদ্রার নাম কি জানা থাকলেও দেশের রাস্তাঘাটের অবস্থা কি জানা থাকে না! সো তারা লেট করবে না তো কারা করবে!
২. পূর্ব প্রস্তুতির অভাব
আপনি পরীক্ষার্থী হলে আপনার উচিৎ সময়ের ৩০ মিনিট আগে উপস্থিত থাকা। তাই জ্যাম কেমন হবে, বাস কেমন চলবে এসব ভেবে সময় হাতে রেখে সেন্টারে আসা বেটার। কিন্তু দেখা যায় অনেকেই অন্য জেলা থেকে ওইদিন সকালের বাসে রওয়ানা দিয়ে ঢাকা আসে! এটা ঠিক না। আপনি সারাজীবন যার জন্য প্রিপারেশন নিলেন, তার জন্য আরেকটু সাবধান হয়ে বা ১০০০ টাকা বেশি খরচ করে কাছাকাছি থাকবেন না কেন? চাইলে এনিহাউ প্রিপারেশন নিয়ে সেন্টারের কাছে থাকা যায়।
৩. সীমাবদ্ধ চিন্তাভাবনা
অনেকে লেটে ঢুকতে না পেরে কান্নায় রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। কারণ তাদের (বা তাদের ফ্যামিলির) কাছে বিসিএস-ই স্বপ্ন-ধ্যান-জ্ঞান! কারণ তারা ভাবে এটা সিকিউর লাইফ দেবে। থাকার জায়গা, যাতায়াত ব্যাবস্থা, দূর্নীতির সুযোগ সব এখানে আছে! এতে করে তারা নিজেদের অন্যান্য পটেনশিয়াল গ্রো করছে না। এরকম লেট করে সহজে ডিমোটিভেটেড হওয়া একটা মানুষ বড় কোনো পদে না থাকাই দেশের জন্য বেটার।
বিলিভ মি, আমি বিএসএস হেটার নই। ভার্সিটি লাইফের একটা পযায়ে আমরা ভাবতাম বিসিএস হলো স্টেরিওটিপিকাল টার্গেট, তাই বন্ধুরা ট্রল করতাম। কিন্তু প্রাইভেট জবের ছিমছাম ইনটেরিয়রের আড়ালে থাকা টক্সিক লাইফ দেখে মনে হয়েছে বিসিএস দিয়ে সম্মানজনক একটা পোস্টে যাওয়া মাচ বেটার ছিল।
এখনো হাতে সময় আছে। এখানে ওইরকম জবাবদিহিতা নেই, কেপিআই ফিলআপের প্রেসার নেই। জাস্ট ভাল প্লান এক্সিকিউশন করে মানুষের উপকার করবেন, নিজের ফ্যামিলিকে নিশ্চিন্ত রাখবেন। তাই একজন ভালো ছাত্র কোনো কারণে পরীক্ষার সুযোগ না পেলে তার জন্য অবশ্যই দুঃখপ্রকাশ করবো। কিন্তু সময়ের জ্ঞান নেই এরকম মানুষদের জন্য দুঃপ্রকাশ করতে পারবোনা। আমরা থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতে সার্ভাইভ্যাল করছি, আমাদের ট্রাফিক কেমন না বুঝে যে দেরি করলে এটা ঠিক বাস্তবধর্মী হলো না। বিসিএস-এ চান্স পাওয়া কোনো ব্যর্থতা নয়, বরং এই সারাউন্ডিং সেন্স না হওয়াই চরম ব্যর্থতা।
আমি ব্যক্তিগতভাবে জীবনের একটা বিশাল সময় ওয়েট করে কাটিয়েছি। ছোটবেলা থেকে বাবা মা পরীক্ষার ১ ঘন্টা আগে রেডি করে হলের সামনে নিয়ে যেত, তারা আমার সময় জ্ঞানের একটা ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু এখন কারো সাথে দেখা হলে সে ২ মিনিট, ৫ মিনিট বলে দুই ঘন্টা পরে আসে! এই ছোটখাট কাজে সময়কে অবমূল্যায়ণের অভ্যাসই তরুণদের বড় পরীক্ষা মিস করায়।
সো ইটস বেটার টু রিজারেক্ট দ্য হ্যাবিট অ্যান্ড লাইফ গোলস। জীবনে অনেক অপশন আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৭